ক্ষুরারোগ
(FMD)
: ১
ক্ষুরারোগ তীব্র প্রকৃতির ছোঁয়াচে ভাইরাস জনিত রোগ।
লক্ষণ
প্রচল্ড জ্বর (১০৫-১০৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট )
মুখ, জিহবা ও পায়ে ফোসকা দেখা দিবে
মুখের ও পায়ের ব্যাথায় মহিষ খাওয়া-দাওয়া করবে না
চিকিৎসা
জীবাণুনাশক দ্বারা মুখ ও পায়ের ক্ষত পরিষ্কার করতে হবে
অ্যান্টিবায়োটিক অথবা সালফোনামাইড ইনজেকশন দিলে সুফল পাওয়া
যায়
আক্রান্ত প্রাণীকে শুকনো ও পরিষ্কার স্থানে রাখতে হবে এবং নরম বা
তরল খাবার
দিতে হবে
মৃত পশুকে গভীর গর্ত করে মাটিতে পুতে ফেলতে হবে।
তড়কা রোগ
(Anthrax) : ২
তড়কা বা অ্যানথ্রাক্স একটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট অতি তীব্র প্রকৃতির মারাত্মক রোগ।
লক্ষণ
ক্ষুধামান্দ্য, দ্রূত শ্বাস-প্রশ্বাস, পেট ফাঁপা, গর্ভপাত ও দেহের
কাঁপুনি
নাক, মুখ, প্রশ্রাব ও মলদ্বার দিয়ে রক্ত ক্ষরণ
শরীরের ভিতরে বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত ক্ষরণ
চিকিৎসা
এন্টিসিরাম ও এন্টিবায়োটিক ভাল কাজ করে
এন্টিসিরাম ১০০-২৫০ মিলি; প্রতিটি মহিষকে প্রত্যহ শিরায় ইনজেকশন
দিতে
হবে
একই সময়ে এন্টিসিরাম ও এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন অধিক কার্যকর
পেনিসিলিন জাতীয় ঔষধ দিনে দুইবার করে ৫ দিন মাংস পেশীতে ইনজেকশন
দিতে হয়
(প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১০,০০০ ইউনিট করে)
মৃত প্রাণী ও প্রাণীর শরীর থেকে নির্গত রক্ত ও মল, মূত্র গভীর গর্ত করে চুন সহকারে পুতে
ফেলতে হবে।
পরে প্রাণীর আবাসস্থল ১০% ফরমালডিহাইড দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
বাদলা রোগ
(Black Quarter) : ৩
প্রধানত ৬ মাস থেকে ২ বছর বয়স্ক মহিষ আক্রান্ত হয়।
লক্ষণ
অতি তীব্র ও তীব্র এই দুই প্রকার লক্ষণ প্রকাশ পায়।
আক্রান্ত স্থান ফুলে যাবে, পচন ধরবে ও মহিষ খুড়িয়ে খুড়িয়ে
হাটবে
আক্রান্ত স্থানে চাপ দিলে পচ পচ শব্দ হবে
চিকিৎসা
পেনিসিলিন ইনজেকশন দিতে হয় (প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১০,০০০
আই
ইউ)
প্রথমে ক্রিস্টালিন পেনিসিলিন ইনজেকশন (শিরায়) দিতে হবে
পরবর্তীতে প্রোকেইন পেনিসিলিন অর্ধেক মাত্রায় আক্রান্ত পেশী এবং
মাংশপেশীতে
দিনে দুইবার করে ৫-৭ দিন দিতে হবে
গলাফোলা রোগ (Hemorrhagic Septicemia) : ৪
লক্ষণ
হঠাৎ করে দেহের তাপমাত্রা অত্যধিক বৃদ্ধি পায় (১০৫°-১০৭°
ফা.)
গলার নীচের অংশ ফুলে যায় এবং হাত দিলে গরম অনুভূত হয়। ফুলা ক্রমশ
গলা থেকে
বুক পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে
শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় শব্দ হয়, নাক-মুখ দিয়ে তরল পদার্থ নিঃসরণ
হয়
অনেক সময় জিহবা ফুলে যায়, জিহবা বের করে শ্বাস-প্রশ্বাস
নেয়
রোগ খুবই তীব্র প্রকৃতির হলে পশু ২৪ ঘন্টার মধ্যে মারা যায়
চিকিৎসা
লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে চিকিৎসা করালে ভাল ফল পাওয়া যায়
প্রতি ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১০-২০ মিলি ওটেট্রো ভেট অথবা ২-৭ মিলি এসাইপিলিন অথবা
স্ট্রেপটোপেন
ইনজেকশন ৫-৭ মিলি মাংসে প্রয়োগ করতে হবে
প্রতিটি ইনজেকশন ২৪ ঘন্টা পরপর ৩-৫ দিন প্রয়োগ করতে হবে
এর সাথে এন্টিহিস্টামিন ইনজেকশন ৫-১০ মিলি (প্রতি ১০০কেজির জন্য)
দিনে ২-৩
বার মাংশে প্রয়োগ করতে হবে
ম্যসিটাইটিস : ৫
প্রাণীর ওলানের গ্লান্ডুলার টিস্যুর প্রদাহওক ম্যসিটাইটিস বা ওলান ফোলা বা ঠুনকো রোগ বলে।
চিকিৎসা
ওলানে এন্টিবায়োটিক ও ব্যাথানাশক ইনজেকশন দিতে হবে
পাইপের সাহায্যে ১০-১৫ মিনিট ঠান্ডা পানি স্প্রে করা যেতে
পারে
দুধ দোহনের পূর্বে দোহনকারীর হাত, গাভীর ওলান ও বাট পানি দিয়ে
ধুয়ে পরিস্কার
কাপড় দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে
দুধ জ্বর
: ৬
বেশি দুধ প্রদান করে এরকম গাভীতে রোগটি বেশি দেখা যায়। গাভীর রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমান ৫
মিলি গ্রাম এর
কম হলে এ রোগ হয়।
লক্ষণ
ক্ষুধামন্দা, পেশীতে কাপুনি, অনুভূতিহীন ও নিদ্রাভাব
চোখের মনি বড় হয়ে যায় ও জিহবা বের হয়ে আসে
শেষের দিকে গাভী বুকে ভর দিয়ে মাথা এক দিকে বাকিয়ে শুয়ে
পড়ে
অচেতন হয়, পেট ফুলে যায় এবং মারা যায়
চিকিৎসা
যত দ্রুত সম্ভব ক্যালসিয়াম বোরো গ্লুকোনেট সলুশন ইনজেকশন দিতে হবে।
অর্ধেক ত্বকের নিচে এবং বাকি অর্ধেক শিরায় ৫-১০ মিনিট ধরে দিতে হয়।
অতিরিক্ত মাত্রায় এবং দ্রুত শিরায় দিলে প্রাণীর মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে
সঠিক মাত্রায় ক্যালসিয়াম রক্তে গেলেই গাভী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।
অপর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম সলুশন দিয়ে চিকিৎসা করলে গাভী সুস্থ হয় না বা পুনরায় অসুস্থ হয়
কিটোসিস :
৭
এটি একটি বিপাকীয় রোগ। অধিক দুধ উৎপাদনশীল গাভীতে এ রোগ হয়। রক্তে গ্লুকোজের অভাব এ রোগের
কারণ।
লক্ষণ
বাচ্চা প্রসবের ২০-৩০ দিনের মধ্যে এ রোগের প্রভাব সবচেয়ে বেশি
দেখা
যায়
সাধারণত বাচ্চা প্রসবের প্রথম মাসে সর্বোচ্চ, দ্বিতীয় মাসে
অপেক্ষাকৃত কম
এবং গর্ভাবস্থায় কদাচিৎ এ রোগ দেখা যায়
ল্যাকটেশন
টিটেনি : ৮
ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতিজনিত একটি অতি মারাত্বক রোগ। বাচ্চা প্রসবের দুই মাসের মধ্যে এ রোগের
প্রাদুর্ভাব
সর্বোচ্চ। প্রাণীকে শুধু ঘাস খাওয়ালে এ রোগ হয়।
লক্ষণ
মাঝে মাঝে উত্তেজিত হয়ে লাফালাফি
খিচুনি এবং দেহের তাপ ও শ্বাস-প্রশ্বাস বৃদ্ধি
চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক ঘন্টার মধ্যে মৃত্যু
চিকিৎসা না করালে মহিষ মারা যেতে পারে।
পেট ফাপা
: ১০
অতিরিক্ত গ্যাস জমে পেট ফাপা রোগের সৃষ্টি হয়।
লক্ষণ
প্রথমে গরুর পেটের বামদিকের উপরের অংশ ফুলে, পরে পুরো পেট ফুলে
যায়
পেটে লাথি মারে, ঘন ঘন উঠাবসা করে, মাঝে মাঝে মাটিতে গড়াগড়ি
করে
পেটে আঙ্গুল দিয়ে টোকা দিলে বিশেষ শব্দ হয়
চিকিৎসা না করালে মহিষ মারা যেতে পারে।
রক্ত-প্রস্রাব
বা ব্যাবেসিওসিস : ১১
জীবজন্তুর আঁটুলিবাহিত রোগের মধ্যে এটি অন্যতম। এ রোগে উৎপাদন হ্রাসের পাশাপাশি গরুর মুত্যু
পর্যন্ত হতে
পারে। সাধারণত ৯ মাস বয়স পর্যন্ত গরু মহিষ এ রোগে আক্রান্ত হয় না।
লক্ষণ
ক্ষুধামান্দ্য ও উচ্চ তাপমাত্রা (১০৩°-১০৭° ফা)
শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দনের হার বেড়ে যাওয়া
রক্তশূন্যতা ও রক্তপ্রস্রাব দেখা দেয়
যথাসময়ে চিকিৎসা না করলে ৪-৮ দিনের মধ্যে আক্রান্ত প্রাণীর মৃত্যু
হয়
চিকিৎসা
ডিমিনাজিন ডাইএসিটুরেট (যেমন Berenil, Babcop vet) প্রতি ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ০.৮
মিলি পরিশ্রত
পানিতে (৬%) মিশিয়ে মাংসপেশীতে ইনজেকশন দিতে হবে
এছাড়া ইমিডোর্কাব ডাইপ্রোপিয়োনেট (যেমন Babcure, Imicarp) প্রতি ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য
১.২
মিলিগ্রাম হিসাবে ত্বকের নিচে একবার ইনজেকশন বেশ র্কাযকর
লাম্পি
স্কিন
ডিডিজ (Lumpy Skin Disease) : ১২
গোট পক্সি এর ভাইরাস যখন গরুতে সংক্রামিত হয় তখন রোগটিকে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এল এস ডি)
বলা হয়।
রোগটি মশা-মাছি, রক্ত চোষা আঠালী বা মাইট দ্বারা আক্রান্ত প্রাণী হতে অন্য প্রাণীতে ছড়ায়।
আক্রান্ত প্রাণীর লালা, দুধ, সর্দি এবং সিমেন এর মাধ্যমেও রোগটি ছড়াতে পারে।
লক্ষণ
প্রথমে জ্বর হয় যা ১০৪° থেকে ১০৫° ফা:। সাথে নাক-মুখ দিয়ে তরল
পদার্থ বের
হয়
প্রাণীর চামড়ার নিচে ফোস্কা বা পিন্ড দেখা যায়। ফোস্কা থেকে
লোম উঠে যায়
এবং ক্ষত সৃষ্টি হয়
চোখ দিয়ে পানি পড়ে। চোখ লাল ও ঘোলা হয়ে যায়। ক্ষুধামন্দা
হয়
চিকিৎসা
আক্রান্ত প্রাণীর ফোস্কা ফেঁটে গেলে প্রভিসেপ সল্যুশন বা আয়োডিন মিশ্রণ দিয়ে পরিস্কার
করতে হবে
প্রচুর পানি বা লালি/চিটা গুড়ের সরবত খাওয়াতে হবে
বিভিন্ন মিনারেল মিশ্রণ যেমন- ফেরাস সালফেট, কপার সালফেট, কোবাল্ট মিশ্রণ, জিংক মিশ্রণ
খাওয়াতে হবে
ভিটামিন-বি ইনজেকশনের মাধ্যমে এবং এন্টিহিস্টিামিন, ব্যাথানাশক, এন্টিপাইরেটিক ও
আইভারমেকটিন গ্রুপের
ওষুধ দিয়ে প্রানীর চিকিৎসা করাতে হবে