খামারগুরু

  • দেশী মুরগির জাত চেনা
  • বানিজ্যিক খামার নির্মাণে করণীয়
  • আলোক ব্যবস্থাপনা
  • বাচ্চা সংগ্রহ ও পরিবহন
  • বাচ্চা পালনে করনীয়
  • রেশন ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে উপযুক্ত খাদ্য তৈরি
  • খাদ্য ও পানি ব্যবস্থাপনা
  • মুরগির প্রধান প্রধান রোগ
  • টিকাদান কর্মসূচি
  • আনুষঙ্গিক

Rigg Technology © All rights reserved

  • মহিষ
  • গরু
  • দুগ্ধ খামার
  • ছাগল
  • মুরগি

রানীক্ষেত : ১

এটি মোরগ-মুরগির ভাইরাস জনিত একটি মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ। সকল বয়সের মোরগ-মুরগি এ রোগে আক্রান্ত হয়।

লক্ষণ
চোখ বন্ধ করে ঝিমাতে থাকে ও মুরগীর ডানা ঝুলে পড়ে
শ্বাসনালী ও খাদ্যনালীর মিলনস্থল অবশ হয়ে যায়, ফলে খাবার গ্রহন কমিয়ে দেয়
আক্রান্ত মুরগী পানি শুন্যতায় ভোগে, এবং ল্যাংড়া হয়ে যেতে পারে
মলাশয় ফুলে বড় হয়ে যায়, ফলে চুনে পায়খানা আটকে থাকে
চিকিৎসা
ভাইরাসের বিরুদ্ধে তেমন কোন কাযকারী ব্যবস্থা নাই
তবে দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমন রোধে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে
পাতলা পায়খানা করলে ইলেক্ট্রোলাইট দিতে হবে
পানিতে দ্রবনীয় ভিটামিন দিলে ভালো কাজ করে
এছাড়া প্রতিদিন খামারের চারপাশে টিমসেন স্প্রে করতে হবে

গামবোরো : ২

ইহা মোরগ-মুরগির ভাইরাস জনিত একটি মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ।

লক্ষণ
মুরগীর দেহের পালক উসকো খুসকো হয়ে যায়
পায়খানার সাথে পানি বের হয়, অথাৎ পায়খানা ছড়িয়ে পড়ে
মুরগীর দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়
আক্রান্ত মুরগী মাথা সামনের দিকে নুইয়ে রাখে
চিকিৎসা
গামবোরো রোগের কাযর্করী কোন চিকিৎসা নাই
এই রোগের সাথে সাথে অন্যান্য রোগ যেমন –কক্সিওডিওসিস হতে পারে। তাই যে কোন একটি এন্টিবায়োটিক দেয়া যেতে পারে
সাথে সালফার গ্রুপের একটি ড্রাগ দেয়া যেতে পারে
এছাড়া পানিতে ভিনেগার এবং পানি গহনের পরিমান বৃদ্ধির জন্য চিনি দেয়া যেতে পারে

বার্ড ফ্লু /এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা : ৩

বার্ড ফ্লু /এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের লক্ষন ভাইরাসের তীব্রতা, প্রজাতি, এবং পাখির বয়সের উপর নিভর করে। এমনকি পরিবেশের কারনেও লক্ষণ পরিবর্তিত হতে পারে।

লক্ষণ
এই রোগ হলে কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই অনেক মুরগী মারা যায়
মাথার ঝুটি কালচে রঙ এর হয়ে যায় এবং হালকা রক্তবিন্দু থাকতে পারে
মাথা ফুলে যাবে এবং পানি জমে যেতে পারে
আক্রান্ত মুরগীর পালকহীন অংশে (যেমন- পা) রক্তবিন্দু পাওয়া যাবে
মাত্রাতিরিক্ত পানি গ্রহন লক্ষ্য করা যায়
লেয়ার মুরগির ক্ষেত্রে প্রথমে নরম খোলাযুক্ত ডিম পাড়ে, এবং পরে ডিম পাড়া বন্ধ করে দেয়
চিকিৎসা
গামবোরো রোগের কাযর্করী কোন চিকিৎসা নাই
খামারের বায়োসিকিউরিটি/জীব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে

মোরগ মুরগির বসন্ত : ৪

ভাইরাস জনিত একটি সংক্রামক রোগ। বয়স্ক মুরগির চেয়ে বাচ্চা বেশী আক্রান্ত হয় এবং এ রোগে মুরগির বাচ্চার মৃত্যুর হার বেশী।

লক্ষণ
সাধারণতঃ শরীরের পালকহীন স্থানেই এসকল গুটি বেশী হয়
এ রোগে আক্রান্ত মোরগ মুরগির ঝুটি, কানের লতি, চোখ, ঠোঁট ও মুখের ভিতর গুটি বা ফোসকা দেখা যায়
চিকিৎসা
এ রোগের কার্যকরী কোন চিকিৎসা নাই
তবে দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমন রোধে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে
পটাশ বা ফিটকিরির পানিতে তুলা ভিজিয়ে ক্ষতস্থান পরিস্কার করে দিতে হবে
জীবাণুনাশক ঔষধ দিয়ে বাসস্থান ও ব্যবহার্য দ্রবাদি পরিস্কার করতে হবে

মারেক্স ডিজিজ : ৫

এটি একপ্রকার ভাইরাসঘটিত রোগ। এ রোগকে ফাউল প্যারালাইসিসও বলা হয়ে থাকে।

লক্ষণ
মুরগিগুলোকে দুর্বল দেখা যায়
এক পায়ে পক্ষাঘাত হলে কোন প্রকার খুড়িয়ে হাঁটে
দুপায়ে পক্ষাঘাত হলে মুরগি শুয়ে থাকে
পাখাতে পক্ষাঘাত হলে পাখা ঝুলে পড়ে
ঘাড়ে অবশতা হলে মাথা একদিকে বাঁকা হয়ে যায়
মস্তিস্ক আক্রান্ত হলে দেহে খিচুনী দেখা দেয়
চিকিৎসা
ভাইরাস রোগের কোন চিকিৎসা নেই
তবে ২য় পর্যায়ের ব্যাকটেরিয়া হতে রক্ষার জন্য চিকিৎসা করতে হয়
এজন্য পানিতে এনরোফ্লক্সাসিন ঔষধ দেওয়া যেতে পারে
এছাড়া পানিতে টক্সিন নিউট্রালাইজার জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করতে হবে

লিম্ফয়েড লিউকোসিস : ৬

লিম্ফয়েড লিউকোসিস মুরগীর টিউমার সৃষ্টিকারী ভাইরাস রোগ। এ রোগের ক্ষেএে টিউমার সৃষ্টি হয়। এ ভাইরাস যকৃতের মধ্যে প্রবেশ করে এবং টিউমার সৃষ্টি করে। ফলে যকৃত বড় হয়ে যায়।

লক্ষণ
দেহের পালক ভাঙ্গা ভাঙ্গা ও ময়লা হয়। আক্রান্ত মুরগীর ঝুটি নীলাভ হয়ে যায়
ডায়রিয়া হতে পারে
যকৃত বড় হওয়ার কারণে তলপেট বড় দেখা যায়
কিন্তু মারেক্সে আক্রান্ত মুরগীর মত এক পা সামনের দিকে অন্য পা পিছনের দিকে থাকে না
ডিম পাড়া মুরগীতে ডিম উৎপাদন কমে যায়
অনেক সময় মুরগীর পায়ের ও ডানার হাড়ের অস্থি অস্বাভাবিক মোটা হয়ে বেকে যায়
চিকিৎসা
ভাইরাস রোগের কোন চিকিৎসা নেই
তবে ২য় পর্যায়ের ব্যাকটেরিয়া হতে রক্ষার জন্য চিকিৎসা করতে হয়
এজন্য পানিতে এনরোফ্লক্সাসিন ঔষধ দেওয়া যেতে পারে
এছাড়া পানিতে টক্সিন নিউট্রালাইজার জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করতে হবে

এনফেকশাস ল্যারিংগোট্রাকিয়াটিস : ৭

লক্ষণ
শ্বাসনালীতে রত্তক্ষরণ, শ্লেষ্মা ইত্যাদি জমার ফলে আক্রান্ত মুরগীর শ্বাসকষ্ট হয়
চোখ ও নাক দিয়ে পানি গড়াতে থাকে
আক্রান্ত মুরগি মুখ খোলা রাখে এবং অনেক সময় ঘাড় টান করে মাথা উপরের দিকে রেখে দু পায়ের উপর ভর করে হা করে নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করে
চিকিৎসা
ভাইরাসজনিত রোগের কোন চিকিৎসা নেই
তবে ২য় পর্যায়ের ব্যাকটেরিয়া হতে রক্ষার জন্য ইরাইথ্রোমাইসিন, সিটিসি, অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ইত্যাদি এন্টিবায়োটিক এর যে কোনটি দেওয়া যেতে পারে

আক্রান্ত মৃত মুরগিকে অতিদ্রুত আগুনে পুড়িয়ে বা মাটির গভীরে পুতে ফেলতে হবে। ভালভাবে ডিসইনফেকশন করার ঐ শেডে পুনরায় ৩ সপ্তাহ পর মুরগী তোলা যাবে।


মাইক্রোপ্লাজমোলেসিস : ৮

মাইক্রোপ্লাজমোলেসিস হলে ডিমপাড়া মুরগীর ১০-২০% ডিম উৎপাদন কমে যায়। এছাড়া মাংস উৎপাদনকারী মুরগীর ১০-২০% ওজন কমে যায়।

লক্ষণ
মুরগী ঘড় ঘড় শব্দ করে; রাত্রে বেশি ভালো বোঝা যায়
আক্রান্ত মুরগী মুখ হা করে শ্বাস নেয়
মুখ ফুলে যায় ও শরীরের ওজন কমে যায়
চিকিৎসা
সিপ্রোফ্লোক্সাসিন ৩-৫ দিন (১সিসি, ১লি এ) প্রয়োগ করতে হবে
এছাড়া টাইলোসিন টারট্রেট (২০%) ২.৫ গ্রাম/ লি এবং ডক্সিসাইক্লিন হাইড্রোক্লোরাইড (১০%) ১ গ্রাম/ লি এ দেয়া যেতে পারে

এসপারজিলোসিস : ৯

লক্ষণ
তীব্র প্রকৃতির রোগে ক্ষুধামন্দা, পিপাসা বৃদ্ধি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়
বাচ্চা শুকিয়ে যায় ও দুর্বল হয়ে পড়ে
শ্বাসকষ্টের কারনে বাচ্চা মুখ হা করে ঘাড় ও মাথা উপরের দিকে টান করে শ্বাস গ্রহণ করে
শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় ঘড়ঘড় শব্দ হয়
আক্রান্ত বাচ্চার চোখের পাতা ফুলে যায়৷ বয়স্ক বাচ্চার চোখে আলসার বা ঘা দেখা দিতে পারে
অতি তীব্র প্রকৃতির রোগের ক্ষেত্রে অনেক সময় কোনো লক্ষণ ছাড়াই বাচ্চা মারা যেতে পারে
চিকিৎসা
চিকিৎসা নেই বলে ধরে নেয়া হয়
তবে ছত্রাক নাশক স্প্রে করা যেতে পারে

ফাউল কলেরা : ১০

এটি ব্যাকটেরিয়াজনিক অতি সংক্রামক একটি রোগ।

লক্ষণ
মাথার ঝুটি ও গলার ফুল ফুলে যাবে
মুরগী দুর্বল হয়ে যাবে
সবুজাভ বা হলুদাভ ডায়রিয়া হতে পারে
মুখ দিয়ে লালা পড়বে
মাথা নিচের দিকে দিয়ে ঝিমাবে
ডিম উৎপাদন কমে যাবে
চিকিৎসা
যেহেতু ব্যাক্টেরিয়াজনিত রোগ তাই যে কোন একটি ভালো এন্টিবায়োটিক দিতে হবে
এছাড়া যেহেতু পায়খানার সমস্যা আছে তাই একটি সালফার গ্রুপের ঔষধ দিতে হবে
গরম বেশি পড়লে ভিটামিন সি / লেবুর রস দেয়া যেতে পারে

ফাউল টাইফয়েড : ১১

এটি মোরগ-মুরগির ব্যাকটেরিয়াজনিত একটি সংক্রামক রোগ।

লক্ষণ
মলদ্বারের চারপাশে সাদা মল লেগে থাকে
সবুজ বা হলুদ বর্ণের অতি দূর্গন্ধযুক্ত ডায়রিয়া দেখা দেয়
মাথা ও ঝুটি বিবর্ণ ও সংকুচিত হয়
অতি তীব্র প্রকৃতির রোগে মুরগি হঠাৎ করে মারা যায়
চিকিৎসা
কোট্রিমোক্সাজোল, ক্লেরামফেনিকেল এবং পেনিসিলিন গ্রুপের ঔষধ এ রোগে বেশ কার্যকরী
সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে ভিটামিন ও মিনারেলের ব্যবহার দ্রুত সেরে উঠতে সহায়তা করে

আক্রান্ত মুরগির ডিম ফুটানো থেকে বিরত থাকতে হবে।


রক্ত আমাশায় : ১২

সাধারণতঃ ২ মাসের কম বয়সের বাচ্চার এই রোগ হয়। এ রোগকে কক্সিডিওসিসও বলা হয়।

লক্ষণ
আক্রান্ত বাচ্চাগুলো একত্রে জড়ো হয়ে থাকে এবং বসে বসে ঝিমায়
রক্তমিশ্রিত লাল পাতলা পায়খানা করে
পালক ঝুলে পড়ে
চিকিৎসা
সালফানামাইড জাতীয় ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করা যেতে পারে
আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে খাদ্যে নির্দিষ্ট পরিমান কক্সিডিওষ্ট্যাট নামক ঔষধ সরবরাহ করা যেতে পারে

এভিয়ান গাউট : ১৩

লক্ষণ
পায়ুপথের চারপাশে প্রচুর সাদা চুনের মত পদার্থ (ইউরেটস) লেগে থাকে
দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার ক্ষেত্রে শ্বাসনালী, মাথার ঝুটি, কানের লতি ইত্যাদিতে ও ইউরেটস দেখা যায়
মুরগি ঝিমায় এবং কিছু ক্ষেত্রে সবুজাভ পাতলা পায়খানা হয়
আক্রান্ত মুরগির শারীরিক দূর্বলতা দেখা যায়, উসখো খুসকো পালক ও ভেজা পায়ু পথ দেখা যায়
চিকিৎসা
প্রাথমিক অবস্থায় প্রচুর পরিমাণে পানি এবং পানির পাত্র রাখতে হবে
এলুপিউরিনল জাতীয় ঔষধ প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ২০-৪০ মিগ্রা (১ গ্রাম ১ লিটার) হিসাবে ব্যবহারে ইউরিক এসিড এর মাত্রা হ্রাস পায়
তরল টক্সিন বাইন্ডার (যেমন Two plus, Toxynil plus) এবং লিভার টনিক ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে

সাবধানতা
ব্রিডার ফার্ম ও হ্যাচারীতে বাৎসরিক চেক আপ এর মাধ্যমে মুরগীর রত্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা নির্ণয় করতে হবে
খাদ্যের সাথে অধিক সোডিয়াম বাইর্কাবনেট (প্রতি টন খাদ্যে ২ কেজির অধিক নয়) ব্যবহার না করা